ইরানের পরিস্থিতি ‘গুরুতর’: জাতিসংঘ
ইরানে চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, ইরানের পরিস্থিতি খুবই ‘গুরুতর’। বিক্ষোভকারীদের ওপর কর্তৃপক্ষের কঠোর দমনাভিযানের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে গত দুমাসের বিক্ষোভে ৩০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গত এক সপ্তাহেই ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল কুর্দি-জনবহুল এলাকায় মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের।
জেনেভায় মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তুর্ক বলেন, ‘গত সপ্তাহে দুই শিশুর মৃত্যুসহ ইরানের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমনাভিযান দেশটির গুরুতর পরিস্থিতিকে সামনে নিয়ে এসেছে।’
বিবিসি জানায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে ইরানের এই গুরুতর বিপজ্জনক পরিস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর না করার জন্য ইরান কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করা হয়েছে।
মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র লিজ থ্রসেল বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দমন করার কারণে বিক্ষোভকারীর মৃত্যু বাড়ছে।
তিনি নিহতের সংখ্যা ৩০০-রও বেশি বলে উল্লেখ করেন এবং মৃতদেহগুলো আটকে রাখা হচ্ছে- এমন খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চুপ না থাকলে কিংবা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি না দেওয়া পর্যন্ত মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইরানে গত ৯ সপ্তাহে বিক্ষোভে গুলিতে নিহত কয়েকজনের পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন যে, তারা মৃতদেহ মর্গ থেকে আনতে গেলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন গণমাধ্যমকে একথা বলার জন্য যে, নিহতরা পথচারী ছিল কিংবা মিলিশিয়া ছিল, যারা দাঙ্গাকারীদের হাতে মারা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, ইরানের বিক্ষোভে নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪০টি শিশু রয়েছে। দেশজুড়ে ৩১ টি প্রদেশের ২৫ টিতেই এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ২২ বছর বয়সি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে আছে ইরান। হিজাববিরোধী এই বিক্ষোভ এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) ইরানের অভ্যন্তরে সহিংসতার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে বলেছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশব্যাপী ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৪১৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫১ শিশু এবং ২১ জন নারীও রয়েছেন।