মুক্তমতসাহিত্য

ঘুরে দাঁড়াও

মো. মিনহাজুল ইসলাম শামীম


‘অনেকটা আঁধারজুড়ে জেগে থাকি আমি; বেঁচে থাকি বেখেয়ালী বাঁধনে!’

অযথা অযুহাতেও নিজেরে বেঁধে রাখি, যে বাঁধন আত্মার, অস্তিত্বের অথবা কবিতার!

মানুষের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে সবসময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে রাখে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে প্রচলিত ধারনার শৃঙ্খলে সে ক্রমান্বয়ে বন্দি হয়ে পড়ে। পরিবেশ যা তাকে ভাবতে শেখায় সে তাই ভাবে,যা করতে বলে তাই করে। যে হতে পারত যুগস্রষ্টা বিজ্ঞানী, হতে পারত শতাব্দীর অভিযাত্রী, অমর কথা শিল্পী, হতে পারত মহান নেতা বা বিপ্লবী, হতে পারত আত্নজয়ী বীর বা ধর্মবেত্তা, সেই মানব শিশুই ভ্রান্ত ধারণার বন্দি হয়ে পরিণত হচ্ছে কর্মবিমুখ, হতাশ, ব্যর্থ কাপুরুষে। এ ব্যর্থতার কারণ মেধা বা সামর্থের অভাব নয়, এই ব্যর্থতার কারণ বস্তগত বাধা নয়, এ ব্যর্থতার কারণ মনোজাগতিক শেকল।

সার্কাসের হাতির জীবনের দিকে তাকালে এই মনোজাগতিক দাসত্বের বিষয়টি বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না।

জঙ্গল থেকে দুরন্তপ্রাণ চঞ্চল হস্তি শাবককে ধরে এনে ছয় ফুট লোহার শেকল দিয়ে শক্ত পাটাতনের সাথে বেঁধে রাখা হয়। প্রথমদিকে হস্তি শিশু শেকল ছেঁড়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালায়। কিন্তু এত ছোট শরীর দিয়ে সে শেকল ভাঙতে পারে না। উল্টো তার পা রক্তাক্ত হয়। ফলে এক সময় এই গণ্ডি ও বন্দিত্বের কাছে হস্তি শিশু আত্মসমর্পণ করে। এভাবে তার মধ্যে তৈরি হয় সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে এই গণ্ডি, এই শেকল থেকে তার মুক্তি নেই। এই তার নিয়তি।

হস্তি শিশু বিশাল দেহ পূর্ণাঙ্গ হাতিতে পরিণত হওয়ার পরও শেকল দিয়ে তাকে ছাগল বাঁধার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেও সে ছয় ফুট বৃত্তকেই তার পৃথিবী ধরে নেয়। যখনই শেকলে টান পড়ে তখনই সে তার বৃত্তের আরও ভেতরে প্রবেশ করে। ভ্রান্ত বিশ্বাস তাকে জানায় এর থেকে মুক্তির সাধ্য তোমার নেই।

এমনকি দেখা গেছে সার্কাসের মেলায় আগুন লাগলেও হাতি তার শেকল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করে না।

কারণ ভ্রান্ত বিশ্বাস তাকে সেখানে দাড় করিয়ে রাখে।

বস্তুত এই শৃঙ্খল লোহার শেকলের নয়, খুঁটির নয়। এ শৃঙ্খল তার মনের।

কিন্তু শুধু মাত্র একবার এই সংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে দিলে দেখা যাবে, আমরা প্রতেক্যেই এক বিপুল শক্তির আধার।এই ভ্রান্ত ধারণার শেকল ভেঙে মুক্ত বিশ্বাসে উপনীত হতে পারাটাই মানুষের স্বাধীনতা।

জীবন বড় অদ্ভুত, জীবনের বাঁকে বাঁকে এত বাধা পেয়ে আমরা ভুলেই যাই জীবনের সহজ নিয়মগুলো।

আমাদের ভাবনা জুড়েই শুধু জটিলতা ভরা, বাস্তবতার নামে আমরা এড়িয়ে যাই জীবনের সাতরঙ।

জীবন তো কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র, বাস্তবতার দোহাই দিয়ে আসলে কাকে ঠকাচ্ছি?

এইভাবে একটা সময় পিছনে তাকিয়ে দেখা যাবে, কিছুই অর্জন করা যায় নি জীবন থেকে।

যে মানুষ আজ লাশ হয়েছে, সেও একদিন অতৃপ্ত আত্মাকে শান্ত করার নিমিত্তে বতর্মানকে এড়িয়ে চলত।

নিয়ম সব সময় সঠিক শিক্ষা দেয় না, নিয়মের বাইরে গিয়েও আমাদের অনেক কিছু করতে হয়, তাই তো জীবন এত সুন্দর ও অর্থবহ।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension